
কড়া নজর প্রতিবেদকঃ
দেশের হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করে আগুন দিয়ে, অন্ততঃ ২০ টি প্রাণের বিপুল অপচয় করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ইতি-নেতিবাচক দুই অর্থেই ইতোমধ্যে ‘পাবলিক ফিগার’। রাজ্য জয়ের তৃপ্তি আর টানা জিহাদে ধকল কাটাতে ‘মেয়ের বয়সী নারী’ নিয়ে ‘ফূর্তি’র খায়েশ। তর সইছিল না কারণ একদিন পরে আবার লক ডাউন শুরু। তাই বলে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পাবলিক প্লেসে নস্টামি! মুদ্রার অপর পিঠ দেখতেই হলো। ক্লিন ‘কট’। খুনে ভাব চোখ-মুখে, কন্ঠে জিহাদি জোশ, হালের ‘মোল্লা ক্রেজ’ মামুনুল হক ; অনৈতিক কাজে ধরা খেয়ে পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা। অনলবর্ষীর গলার আওয়াজ হয়ে যায় ‘ম্যা..ম্যা’।
লেজে-গোবরে মামুনুলঃ
ধরা খেয়ে নারীর নাম বলেন আমিনা তৈয়বা, দাবি করেন ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’, বাড়ি খুলনায়,শ^শুরের নাম জাহিদুল। ধৃত নারী নিজের নাম বলেন জান্নাত আরা জান্নাত। বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা। মুক্ত হয়ে ‘লাইভে’ এসে কৈফিয়ত দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুতিয়ে যাওয়া মুড়ি’র মত ম্যাড়ম্যাড়ে আওয়াজ। ইতোমধ্যে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে স্ত্রীকে ফোন করে শিখিয়ে-পড়িয়ে দেওয়ার অডিও কথোপকথন ভাইরাল। ‘পুরো বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে আইসা বলব,ওই মহিলা যে ছিল সাথে (দ্বিতীয় স্ত্রী পরিচয়দানকারী) জাফর শহিদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ। .. .. তুমি আবার মাঝখান দিয়া অন্য কিছু মনে কইর না। তোমাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বইলো , হ্যাঁ আমি সব জানি । এই রকম কিছু একটা বইলো।’
মামুনুল স্বঘোষিত রাজাকার আজিজুল হকের ছেলে। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন অনুষ্ঠান একাই অনেকটা ম্লান করে দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী কেবলই ইস্যু। নইলে একই ব্যক্তি ২০১৫ সালে যখন এদেশে আসেন তখন মামুনুল নিশ্চয়ই মাতৃগর্ভে ছিল না। মোদ্দা কথা রাজনীতি। পাদপ্রদীপের আলোয় আসার বাসনা। শনিবার (৩ এপ্রিল) আলোর ঠিক নিচে যে অন্ধকার, সেখানে নিপতিত। অশান্তির আগুন জে¦লে রক্ত মাড়িয়ে শর্টকাট ক্ষমতায় যাওয়ার অভিলাষী, নিমিষেই পরিণত হয়েছে ‘তৃতীয় শ্রেণীর কামুকে’।

ধরা খেয়ে স্ত্রীকে যা শিখিয়ে দেয় মামুনুলঃ
স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর স্ত্রীকে ফোন করেছিলেন হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। তার এই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ফোনালাপে রিসোর্টের ওই নারীকে জনৈক শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের স্ত্রী সম্বোধন করেন মামুনুল। বাসায় গিয়ে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করবে জানিয়ে স্ত্রীকে আগে থেকেই ‘সব জানি বলে’ মিথ্যা কথা বলার পরামর্শ দেন।
স্ত্রীঃ আসসালামু আলাইকুম।
মামুনুলঃ ওলাইকুম সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। পুরা বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে আইসা বলবো। ওই মহিলা যে ছিল সাথে সে হইলো আমগো শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ। বুঝছো? ওইটা নিয়া এমন একটা মানে অবস্থা এরকম তৈরি হইয়া গেছে যে এই কথা বললে তারা ওখানে মানে ই কইরা ফেলছিল আমাকে।
স্ত্রীঃ আচ্ছা, বাসায় আসেন, তারপর যা বলার তারপর বইলেন।
মামুনুল ঃ বলুম তো। তুমি বিষয়টা মানে অন্যান্য কথা বলতে হইবো, পরিস্থিতিটা এমন হইয়া গেছে। এখন এই জন্য তুমি আবার মাঝখান দিয়া অন্য কিছু মনে কইরো না। তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে তুমি বইলো হ্যাঁ আমি সব জানি। এইরকম কিছু একটা বইলো।
স্ত্রীঃ ঠিক আছে।
মামুনুলঃ আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম।
নারী বললেন নাম ‘জান্নাত’, মামুনুলের দাবি ‘আমিনাঃ
অনৈতিক কাজে ধরা খেয়ে মামুনুল হক সঙ্গে থাকা নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে তার নাম আমিনা তৈয়বা বললেও ওই নারী বলেছেন ভিন্ন নাম। ওই নারী নিজের নাম বলেছেন জান্নাত আরা জান্নাত। তার সঙ্গে এক নারীর কথোপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ হয়। সেখানে নিজেকে জান্নাত আরা জান্নাত বলে পরিচয় দেন তিনি।
প্রশ্নঃ আপনার নাম যেন কী বললেন?
উত্তরঃ জান্নাত আরা (অস্পষ্ট)।
প্রশ্নঃ আপনার বাবার নাম?
উত্তরঃ অলিয়র রহমান।
প্রশ্নঃ বাড়ি কোথায়?
উত্তরঃ ফরিদপুর।
প্রশ্নঃ ভাঙা থানায়?
উত্তরঃ -জ্বি।
প্রশ্নঃ না, আলফাডাঙ্গা থানায়।
প্রশ্নঃ তখন যে বললেন ভাঙা থানায়?
উত্তরঃ ভুল বলেছিলাম।
প্রশ্নঃ আপনি মামুনুল হক সাহেবের সেকেন্ড ওয়াইফ, না?
উত্তরঃ জ্বি।
প্রশ্নঃ আপনাদের কোনো বেবি নেই?
উত্তরঃ না।
প্রশ্নঃ ওনার প্রথম ঘরের স্ত্রীর কয় সন্তান?
উত্তরঃ চার ছেলে।
প্রশ্নঃ মেয়ে নেই?
উত্তরঃ না।
প্রশ্নঃ এখানে কখন আসছেন?
উত্তরঃ লাঞ্চ আওয়ারের পরে।
প্রশ্নঃ এর আগে কোথায় ছিলেন?
উত্তরঃ বাসায়।
প্রশ্নঃ বাসা কোথায়? কোন বাসায়? ঢাকায়?
উত্তরঃ জ্বি।
প্রশ্নঃ ঢাকা বাসা কোথায়?
উত্তরঃ মোহাম্মদপুর।
প্রশ্নঃ মোহাম্মদপুর কোথায়?
উত্তরঃ মোহাম্মদপুরের এখানেই বাসা।
প্রশ্নঃ এখানে কি বেড়াতে আসছিলেন নাকি থাকতে আসছিলেন?
উত্তরঃ বেড়াতে আসছিলাম।
প্রশ্নঃ কোথায়, মিউজিয়ামে?
উত্তরঃ এখানেই আসছিলাম। রেস্ট করতে।
প্রশ্নঃ বাসায় রেস্ট করার জায়গা নেই?
উত্তরঃ অবশ্যই আছে। বাসায় কি সবাই সব সময় রেস্ট করে? বাইরে কেন আসে। দেশের বাইরেও তো যায়। যায় না।
প্রশ্নঃ হ্যাঁ, যায়, সেটা তো প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার জন্য, ঘোরার জন্য।
উত্তরঃ এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ আমরা দেখতে দেখতে একটু লাঞ্চ করে একটু রেস্ট করে চলে যাব।
প্রশ্নঃ হঠাৎ করে এখানে শোরগোল কেন হলো, সবাই কী করে জানতে পারল বা জানল?
উত্তরঃ আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
প্রশ্নঃ আপনি বাথরুমেই কী কারণে এলেন? আপনার তো হাসব্যান্ড।
উত্তরঃ অ্যাকচুয়ালি আমার হাসব্যান্ড ঠিক আছে। কিন্তু আমার হাসব্যান্ড তো আর দশটা হাসব্যান্ডের মতো না। আমি সবার সামনে যেতে পারি না তাই।
মামুনুলের সঙ্গে জড়িয়ে ঝর্না’র সংসার ভাঙ্গেঃ
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. ওলিয়ার রহমান ওরফে ওলি মিয়ার মেজো মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্না। ওলিয়ার রহমান গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। মামুনুল হক ওই নারীকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে নাম বলেন আমিনা তৈয়বা। যদিও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম জান্নাত আরা ঝর্না। মামুনুলের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহ-ঝর্ণার সংসার ভাঙ্গে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচারের পর বিষয়টি জানাজানি হয় সেই নারীর গ্রামেও। ঝর্নার বিয়ে হয়েছে; দুটি সন্তান আছে। এ কথা সবাই জানলেও দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানেন না এলাকাবাসী।
ঝর্নার বাবা ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘জান্নাত আরা ঝর্নার নয় বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারীর চর-কচুড়িয়া গ্রামে। শহীদুল্লাহ ও ঝর্না দম্পতির আব্দুর রহমান ও তামীম নামে দুই পুত্রসন্তান রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে আড়াই বছর আগে শহীদুল্লাহ ও ঝর্নার ডিভোর্স হয়ে যায়। দুই বছর আগে পরিবার থেকে পাত্র দেখে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে নিজেই বিয়ে করেছে ঝর্না। তবে কাকে বিয়ে করেছে তা আমাদের জানায়নি।’
পরিবারের ধারণা, মামুনুলের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে ঝর্ণার ১৭ বছরের সংসার ভাঙ্গে।