
কড়া নজর প্রতিবেদন ঃ
শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপক ওই হাসপাতালের বিশ (২০) শয্যার করোনা ওয়ার্ড একাই দখল করে রেখেছেন। ‘শয্যা দখলবাজ’ এই চিকিৎসকের নাম সুশান্ত কুমার সরকার। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গাজীপুর জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক তিনি। রাজনৈতিক এই পরিচয় পুঁজি করে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে সুশান্ত-রাজত্ব।
কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক সুযোগ-সুবিধের ওয়ার্ডে (এমনিতে সিসিইউ ওয়ার্ড, বর্তমানে করোনা ওয়ার্ড) শয্যা সংখ্যা ২০ টি। কিন্তু একমাত্র রোগী ডাঃ সুশান্ত। তার বিধি-নিষেধ থাকায় অন্য কোন করোনা রোগীর এই ওয়ার্ডে প্রবেশাধিকার নেই। ডাঃ সুশান্তের স্বেচ্ছাচারিতা থেকে নিস্তার নেই সহকর্মীরও। এই হাসপাতালের শিশু রোগ চিকিৎসক মীর কাওসার নিজের করোনা আক্রান্ত মা’কে এই ওয়ার্ডে ভর্তি করাতে পারেননি। একইভাবে ডাঃ সুশান্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন গাজীপুরের একজন সংসদ সদস্যের আত্মীয় কাপাসিয়ার জনৈক কোভিট পজেটিভ নারীকে। মাননীয় ওই সাংসদ এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। ডাঃ সুশান্তের ঔদ্ধত্যের কাছে হার মানতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ওই নারী ঢাকার একাধিক হাসপাতাল ঘুরেও শয্যা খালি পাননি। নিরুপায় হয়ে পুনরায় এই হাসপাতালে আসলে কর্তৃপক্ষ অন্য ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করে নেন।
এ ব্যাপারে তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ হাফিজ উদ্দিন কড়া নজর’র সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপকালে সুশান্ত কুমার সরকারের পুরো ওয়ার্ড দখলে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ আমি ও অধ্যক্ষ সাবেক দু’জনে ওনাকে (সুশান্ত কুমার সরকার) অনুরোধ করেছিলাম। ওনি শুনেননি’।
অবিশ^াসের মত শুনালেও সুশান্ত কুমার সরকারের সা¤্রাজ্যে এটি বড় কোন ঘটনা নয়। এক বছরেরও বেশি সময় শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেলে চলছে সুশান্তরাজ। অবশ্য তাঁর অসদাচরণের ইতিহাস বেশ ‘পুরনো ও সমৃদ্ধ’। মেডিকেল কলেজের প্রথম ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রবীণ চিকিৎসক আলী হায়দার চরম লাঞ্ছিত হন ডাঃ সুশান্তের হাতে। এ ব্যাপারে ডাঃ আলী হায়দার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি,যিনি কলেজেও শিক্ষকতা করেন, ডাঃ সুশান্তের শিকার হন।
এ সব কারণে হাসাপাতালের কেউ তাঁকে ঘাটাতে চান না। তাঁর প্রসঙ্গে মুখ খুলতে কেউ রাজি নন। এই প্রতিবেদক হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ হাফিজ উদ্দিনকে যখন প্রশ্ন করেন ‘স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক বলেই কী উনার এত ক্ষমতা ?’ জবাবে ডাঃ হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘ সাংঠনিক ব্যাপার-স্যাপার আছে এটা না বলাই ভাল’।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ খায়রুজ্জামানের কাছে মেডিকেল কলেজের একজন অধ্যাপক কর্তৃক হাসপাতালের কোভিট ওয়ার্ডের ২০ শয্যা আকঁড়ে রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন ‘আপনিই বলেন এটা সম্ভব না-কি।’ জেলার কোভিট মোকাবেলা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকা সিভিল সার্জন প্রতিবেদককে ‘ভাল করে খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শও দেন’। ‘বিষয়টি একজন আইন প্রণেতা ওহাকিহাল’ শুনে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আচ্ছা আমি খোঁজ নিচ্ছি’। খানিকক্ষন পরে তিনি ফোন ব্যাক করে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। কিন্তু সাফাই গেয়ে বলেন, ‘করোনা রোগীর জন্য আদর্শ স্থান আইসিইউ; সিসিইউ না।’ তাহলে ডাঃ সুশান্ত আইসিইউতে না থেকে পুরো ওয়ার্ড দখল করে আছেন কেন- এমন প্রশ্ন করা হলে সিভিল সার্জনের জবাব ‘এটা বলতে পারব না।’ পরে অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিকবার সিভিল সার্জন প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল করেন। তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম এ রকম – মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিভিল সার্জনের কোনই ভূমিকা নেই; পরিচালক ও অধ্যক্ষই সব। কোভিট কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব এড়াতে পারেন কী-না ? প্রশ্নের জবাবে তিনি ঘুরিয়ে –প্যাঁচিয়ে যে সব কথা বলেছেন তার মর্মার্থ উদ্ধার করতে এ প্রতিবেদক ব্যর্থ।
কে এই সুশান্ত কুমার সরকার ঃ তিনি রেডিওলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এই বিভাগের অধীন রোগ নির্ণয় পরীক্ষা এক্স-রে,আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান,এমআরআই। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রকাশ্য দোস্তি গাজীপুরের পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সঙ্গে। হাসপাতাল ও পপুলার যমজ ভাইয়ের মত মিলেমিশে গেছে। বিকেলে তিনি চেম্বার করেন পপুলারে। ডাঃ সুশান্তের স্ত্রী স্বপ্না রাণী তাজউদ্দীন মেডিকেলের গাইনী বিভাগের কনসালটেন্ট। গত করোনাকালে স্বপ্না রাণী সবচেয়ে কমদিন হাসপাতালে আসা চিকিৎসক ।