কড়া নজর প্রতিবেদকঃ
একজন অটোরিকশাচালক, একজন ডিম বিক্রেতা, দলের নারী সদস্য পরিচ্ছন্নকর্মী এবং দলনেতা রাজমিস্ত্রীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত ছয়মাসে আট কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এই টাকাগুলো তারা প্রতারণা করে অর্জন করেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তারা প্রতারণা করেছেন সব শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত মানুষের সঙ্গে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক মামলা হয়েছে। তিনজনই গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও চক্রের প্রধান শহীদুল এখনো পলাতক। সে প্রথমে রাজমিস্ত্রী ছিলেন। গুলশান-বারিধারা এলাকায় কিছু আফ্রিকান নাগরিকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক হওয়ার পর এই প্রতারণা আয়ত্ব করে। তাকে গ্রেফতারে কাজ করছে ডিবি। পুলিশের ধারণা সে পালিয়ে প্রতিবেশী কোনও দেশে যেতে পারে। তবে সর্বশেষ অবস্থান ঢাকাতেই ছিল। তার তিন অ্যাকাউন্টে গত কয়েকমাসে আট কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১১টি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ‘প্রবাসী ও বিদেশি সেজে পার্সেল পাঠানোর কথা বলে একটি চক্র দফায় দফায় মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। তাদের তিনজনকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
গ্রেফতারকৃতরা হলেন সজিব আহম্মেদ, মর্জিনা আক্তার ও শরিফ হোসাইন। এসময় তাদের হেফাজত হতে ৪৭টি ব্যাংক চেক জব্দ করা হয়।
যেভাবে তারা প্রতারণা করতেন
প্রথমে এই চক্রটি ফেসবুকে বিদেশি নারী ও পুরুষের নাম দিয়ে ভুয়া আইডি খোলে। এরপর সেই আইডি দিয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। কখনও কখনও ইউরোপে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী পরিচয়েও ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। কারও কারও সঙ্গে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক, আবার কারও সঙ্গে স্রেফ বন্ধুত্ব করে। কথাবার্তা চলতে থাকে দীর্ঘদিন। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। টার্গেট ব্যক্তি বন্ধু বা প্রেমিকা ভেবে সরল মনে ব্যক্তিগত অনেক তথ্য শেয়ার করে। এভাবে কয়েক মাস চলতে থাকে।
সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকলে তাদেরকে উপহার পাঠানো হয়েছে বলে জানায় এবং বলে এগুলো তুলতে হলে বিমানবন্দরে কিছু টাকা দিতে হবে। এভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে দফায় দফায় প্রতারকরা ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
যাদের কাছ থেকে প্রতারকরা টাকা নিয়েছে
প্রতারক চক্রের খপ্পরে পরে ৫৯ লাখ টাকা দিয়ে মানসিক রোগী হয়ে মারা যান বরিশালের এক ব্যবসায়ী। নিজেদের প্রবাসী পরিচয় দিয়ে বরিশালের এক ব্যবসায়ীকে প্রথমে প্রস্তাব দেয় চক্রটি, তিনি রাজি হন। এরপর দফায় দফায় তার কাছ থেকে ৫৯ লাখ টাকা নেয়। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এই ব্যবসায়ী এক সময় সংসদ নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন। পরে তিনি যখন প্রতারিত হয়েছেন বলে বুঝতে পারেন তখন মানসিক রোগে আক্রান্ত হোন। কয়েকমাস আগে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে ‘দুই কোটি টাকা’ বলে বিলাপ করতেন।
সাতক্ষীরার এক ইমামকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য রিয়াল পাঠানোর কথা বলে দুই লাখ টাকা নিয়ে নেয় চক্রটি। দলনেতা শহীদুল তাকে বলেন, ‘হুজুর, আমি সৌদি আরবের নাগরিক। আমি বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য কিছু সাহায্য করতে চাই।’ তখন ইমাম তার কথায় বিশ্বাস করেন। উপহার পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকেও কৌশলে দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।
এভাবে তারা অনেকের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।