গাজীপুর মহানগরবাসীর ঘুম হারাম করে দিয়েছে যন্ত্রদানব বুলড্রোজার। যন্ত্রের রাক্ষুসে থাবায় নিমিষেই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ঘরবাড়ি দোকানপাট। সেই সঙ্গে ধূলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের স্বপ্ন-সাধ। চোখের সামনে স্বর্বস্ব নিঃশেষ হতে দেখে অনেকে স্থির থাকতে পারছেন না। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যন্ত্রদানবের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছেন। মুহূর্তেই সন্ত্রাসীরা ছোঁ মেরে তাকে টেনে হিচঁড়ে সরিয়ে নিচ্ছে, মারধর করছে। যোগীর গোপ এলাকার হোসনে আরা বেগমের কথাই ধরা যাক। চার শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন। পুরোটাই চলে গেছে সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্পের গর্ভে। বাঁধা দিতে গিয়ে বোনসহ পরিবারের সকল সদস্য মার খেয়েছেন, ভর্তি হয়েছন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । সংবাদকর্মীদের কাছে তার বক্তব্য ‘পাখির বাসা আছে, আমার বাসা নাই’। কে তাকে সান্ত্বনা দিবে! ভুক্তভোগীরা জানান, ক্ষতিপূরণ ছাড়া ঘর দুয়ার ভাঙার বিষয়ে তারা হাইকোর্টে রিট করেছেন।আদালতের নিষেধাজ্ঞাও মানছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। ভাংচুরের নেশায় যেন পেয়ে বসেছে তাদের। দেশের আইন কানুন তোয়াক্কা না করে সাদা কাগজে আবেদন রেখে কিছু কিছু ক্ষতিপূরণের টাকা দিচ্ছেন।এভাবেই চলছে দেশের বৃহত্তর সিটি কর্পোরেশনটি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মেয়র মহোদয়ের বক্তব্য ‘পুরোটাই চক্রান্ত, সকলেই দিচ্ছে, দু-একজন বাধা সৃষ্টি করছে রাস্তা প্রশস্থকরণ প্রকল্পে’। কিন্তু ভিন্নমত পোষণ করছেন আইনপ্রণেতা এবং যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল । তিনি বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন, “জনগণের উন্নয়নের দোহাই দিয়ে যদি ঘরবাড়ি ভাঙ্গা হয় , সেক্ষেত্রে ঘরবাড়িই যদি না থাকে সড়ক দিয়ে কী হবে?’ তিনি বলেন,’জনগণের সম্মিলিত ক্ষমতার উপর পৃথিবীতে একক কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তি নেই।’
এর প্রমাণও মিলেছে। দুদিন আগে ভোগরা এলাকাবাসী মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে রুখে দিয়েছে। মারমুখী জনতার রুদ্র মূর্তি দেখে মেয়র কোনরকমে গাড়ি নিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে আরো কঠিন দিন অপেক্ষা করছে।
2 Comments