মির্জাপুরের চাঞ্চল্যকর শফি হত্যা মামলার ২০ বছর –
উচ্চ আদালতের ‘ অধিকতর তদন্ত’র আদেশ উপেক্ষা –
নিম্ন আদালত ’বিচার নাটক’ চালিয়ে যাচ্ছে

কড়া নজর প্রতিবেদনঃ
‘ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কার্যবিধিতে অনবরত বেআইনি কর্মকান্ড প্রশ্রয় পেয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত বেআইনি আদেশ প্রদান করেছে। পুলিশ আসামিদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এতে আইনি প্রক্রিয়া ব্যহত হয়েছে। মামলাটি সঠিকভাবে তদন্তপ‚র্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হয় নাই মর্মে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তের অবকাশ আছে। সার্বিক বক্তব্য ও নথি বিশ্লেষণে অত্র মামলার বিষয়ে একটানা উপরের কর্মকর্তা কর্তৃক অধিকতর তদন্ত করার জন্য অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক সিআইডি, বাংলাদেশ, ঢাকাকে বলা হলো’ – উচ্চ আদালত।
২০১০ সালের আগস্টে তারিখে মহামান্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি শেখ রেজুয়ান আলী ও জনাব রইচ উদ্দিনের বেঞ্চ গাজীপুরের ভাওয়াল মির্জাপুরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শফি উদ্দিন (২৫) হত্যা মামলাটির তদন্ত বিষয়ে একটি পিটিশনের রায়ে উল্লেখিত মন্তব্য করেন।
১০ বছর আগে উচ্চ আদালত মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছে। আদেশ অনুযায়ী অধিকতর তদন্ত ছাড়াই গাজীপুরের জজ আদালত মামলাটির বিচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
২০০০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে স্থানীয় আঃ ওহাবের ছেলে শফি উদ্দিনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টার দিকে বাম হাতের কব্জি, উরু-পিঠে কাটা, অন্ডকোষ থেতলানো, হাত-পা দুমড়ানো-মুচড়ানো লাশ পাইনশাইল-ডগরী সড়কের পাশে বাঁশ ঝাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহতের বাবা মোঃ আঃ ছোবাহান বাদি হয়ে তৎকালীন জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন (নং- ৬৩)।
মামলা নিয়ে যাচ্ছেতাই লুকোচুরি, আইন অমান্য ঃ
স্থানীয় হোতাপাড়া ফাঁড়ির দারোগা আঃ হক মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মামুনুর রশিদ তদন্ত করেন। এক পর্যায়ে তদন্তভার ন্যস্ত হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক জসিমউদ্দিনের ওপর। তিনি শুধু আনোয়ার হোসেনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সঙ্গতঃ কারণেই বাদি অভিযোগপত্র নিয়ে আদালতে নারাজি পেশ করেন। আদালত বাদির আবেদন আমলে নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডি-তে প্রেরণ করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মজিবুর মেম্বার, আফসার মোক্তার, মতিউর রহমান, নাসির,বাদল,মাহফুজা, হারুন, আনোয়ার, মালেকসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলাটির বিচার কার্য শুরুর জন্য জেলা জজ আফতাব উদ্দিনের আদালতে স্থানান্তরিত হয়। আসামি আনোয়ার আদালতে রিভিশন করে। আদালত রিভিশন মঞ্জুর করে। অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আনোয়ার কামাল পাশা’র আদালত (নং -১) ১৫ জন আসামিকে আমলে নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
এদিকে বাদি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলা হস্তান্তরের আবেদন করেন। ১২ -০৩-২০০৭ ইং তারিখে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক সৈয়দ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার রেজাউল করিম,এডিএম মির্জা তারিক হিকমত,এএসপি মাসুদ আহম্মদ, পিপি’র সমন্বয়ে গঠিত জেলা কমিটি ২০০৭ সালের ১২ মার্চ মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠান। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে-৩ (বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত,সেপ্টেম্বর-২,২০০৭; ঢাকা) বিচার কাজের জন্য গেজেট জারি হয়।
উচ্চ আদালতে মামলাটি স্থগিত চেয়ে আসামি হারুন আবেদন করেন। আদালত তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। পরে বাদির আর্জির প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মামলার বিভিন্ন ধাপে সংঘটিত নানা অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।
মহামান্য হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণঃ
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি কুখ্যাত হারুন বিগত ২০০৭ সালে মহামান্য হাইকোর্টে শফি হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে ক্রিমিনাল মিস কেস নং১৫০৫৮/২০০৭ দায়ের করেন । বিজ্ঞ বিচারপতি শেখ রেজুয়ান আলী ও জনাব রইচ উদ্দিনের বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন ‘অভিযুক্ত আসামির নারাজি আবেদনের প্রেক্ষিতে মুল চার্জশিট থেকে আসামিদের দায়মুক্তি দিয়ে সম্পূরক চার্জশিট অনুসরণ করা ফৌজদারি কার্যবিধিতে সমীচীন নয়। পর্যবেক্ষণে আরো উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট মোকদ্দমাটিতে অভূতপূর্ব বেআইনি পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিজ্ঞ বেঞ্চ উল্লেখ করেন যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা বিগত ২১-০৬-২০০১ খ্রিঃ তারিখে আদালতে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনকে একমাত্র অপরাধী হিসাবে গণ্য করে চার্জশিট উপস্থাপন করেন। বাদি পক্ষ এই চার্জশিটে আপত্তি জানিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে না-রাজি আবেদন পেশ করেন । আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে তদন্তকারী পুলিশ বিগত ২৬-০৮-২০০২ খ্রিঃ তারিখে একটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। বাদিপক্ষ এই সম্পূরক চার্জশিটেও আপত্তি জানিয়ে না-রাজি আবেদন করেন । আদালত বাদিপক্ষের এরূপ না-রাজি আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে খারিজ করে দেন এবং সম্পূরক চার্জশিট গ্রহণ করে অভিযুক্ত ৫ জন আসামিকে অব্যাহতির আদেশ দেন ।
পরবর্তীতে অভিযুক্ত ও চার্জশিটভুক্ত ১নং আসামি আনোয়ার হোসেন সেশন জজ আদালতে মামলার রিভিশন চাইলে বিজ্ঞ সেশন জজ আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন – ২য় সম্পূরক চার্জশিট অনুসরণ করে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত অভিযুক্ত ৫ জন আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন -যা সম্পূর্ণ বেআইনি হয়েছে ।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপিত চার্জশিট সম্পর্কে ১নং আসামি আনোয়ার হোসেনের না-রাজি আবেদন গৃহীত না হওয়ায় উক্ত আসামি না-রাজি আবেদন বিবেচনার জন্য সেশন জজ আদালতে রিভিশন চান। অভিযুক্ত ও চার্জশিটভুক্ত আসামির এরূপ রিভিশন গৃহীত হওয়ার প্রেক্ষিতে সেশন জজ আদালতও বেআইনি আদেশ প্রদান করেছেন মর্মে -মহামান্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বেঞ্চ মত প্রকাশ করেন ।