কড়া নজর প্রতিবেদন ঃ
একটি ভাইরাসের মধ্যে যখন দুই ধরণের পরিবর্তন একত্রে মিলিত হয় সেটিই ডাবল মিউট্যান্ট।
ভারত জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের যে ‘ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়ান্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এটির কারণেই দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এত বেশি প্রাণঘাতি হয়ে উঠেছে। দ্বি-রূপান্তরের এই কোভিটকে চিহ্নিত করা হয়েছে বি.১.৬১৭ হিসেবে। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে এই প্রকরণটি বেশি সংখ্যায় পাওয়া গেছে। ভারতের একজন শীর্ষ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছেন, দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী।
এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বিজয় রাঘবন স্বীকার করেছেন যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এতোটা ভঙ্কর হবে, সেটি বিশেষজ্ঞরা অনুমান করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ভাইরাস বেশি মাত্রায় সংক্রমিত হবার ফলে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী।’ তবে তৃতীয় ঢেউ কখন আসতে পারে সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ভারতের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জায়গা হচ্ছে না। এছাড়া তীব্র অক্সিজেন সংকটের পাশাপাশি মরদেহ সৎকার নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য কয়েকটি রাজ্যে স্থানীয়ভাবে লকডাউন আরোপ করা হলেও দেশজুড়ে লকডাউনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
দ্বি-রূপান্তর প্রকরণ কোথায় পাওয়া গেছে ?
ভারতে ১৩ হাজার নমুনা সিকোয়েন্স করে আটটি রাজ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি নমুনায় উদ্বেগজনক ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়ান্ট পাওয়া গেছে। গত এক মাসের বেশি সময় যাবৎ সরকার বলছে, বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্ট বর্তমান দ্বিতীয় ঢেউয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়। ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে ব্রিটিশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল মিউটেশনের কোন সম্পর্ক নেই বলেও উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা। ভাইরোলজিস্ট শহীদ জামিলের আগে বিবিসিকে বলেন, ভাইরাস মিউটেশনের দিকে ভারত অনেক দেরিতে নজর দেয়া শুরু করেছে। ফেব্রæয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে যথাযথভাবে নমুনা সিকোয়েসিং’র প্রতি জোর দিয়েছে। জামিল বলেন, ‘ভারতে যত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার মাত্র এক শতাংশ সিকোয়েন্স করা হয়। অন্যদিকে সংক্রমণের সর্বোচ্চ সময়ে ব্রিটেনে সিকোয়েন্স করা হয় ৫-৬ শতাংশ।’
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদিও এখন বলছে যে দেশটিতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সাথে ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়ান্টে’র সম্পর্ক আছে, তবে একই সাথে তারা একথাও বলছে যে দুটো বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সর্বশেষ পরিস্থিতি ঃ দিল্লিকে প্রতিদিন অবশ্যই ৭০০ মেট্রিকটন করে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। শুক্রবার (৭ মে) ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে এ নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অক্সিজেনের জোগান নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে দিল্লি সরকারের বেশকিছু দিন ধরেই আইনি টানাপোড়েন চলছিল। শুক্রবার মামলার শুনানি চলাকালীন দিল্লি সরকারের পক্ষেই রায় দেয় আদালত। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘৭০০ মেট্রিক টন বলছি মানে ৭০০ মেট্রিক টনই লাগবে। প্রতিদিন দিল্লিকে ৭০০ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য করবেন না।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ধুঁকছে রাজধানী। সেখানে প্রতিদিন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। দৈনিক মৃত্যু ঘোরাফেরা করছে ৩শর আশপাশে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন ঘাটতির অভিযোগ উঠে আসছে। বিষয়টি নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের মধ্যে আইনি টানাপোড়েন চলছে। সেই পরিস্থিতিতেই শুক্রবার দিল্লির পক্ষে রায় দিল আদালত।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিল্লির চাহিদা যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, এই হিসাব-নিকাশ করতে সময় লাগবে। ততদিন অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তাই আপাতত দিল্লিকে প্রতিদিন ৭০০ মেট্রিক টন করে অক্সিজেন দিতে হবে। সব হিসাব-নিকাশ খতিয়ে দেখে আদালত পরবর্তী রায় না দেয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ বহাল থাকবে। এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ মে) ভারতে আবারও করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে। এ দিন ভারতে ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় ২ হাজার বেশি। আর এই সময়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ৯১৫ জন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুসারে, ভারতে এ নিয়ে টানা ১০ দিন ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজারের বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলো। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬ জন। আর মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৮৫ হাজার।