কড়া নজর প্রতিবেদন ঃ
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৭৮ জনে। এ ছাড়া দেশে নতুন করে ৮ হাজার ৪৮৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার ৪২ জনে।
এদিকে লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৩২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যৌক্তিক কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। দ্বিতীয় দিনে আজ ঢাকায় সকাল থেকে মানুষের চলাচল ছিল কম। সাপ্তাহিক ছুটি ও বৃষ্টির কারণে প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। পুলিশ বলছে প্রধান প্রধান সড়কগুলোর চেয়ে রাজধানীর অলিগলিতে মানুষের চলাচল ছিল বেশি। গলিতে আড্ডাও দিতে দেখা গেছে অনেককে। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২০৮ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ট্রাফিক পুলিশ ৬৮ টি গাড়িকে এক লাখ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছে।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৬৬টি পরীক্ষাগারে ৩০ হাজার ১২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যা আগের ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ২ হাজার ৪৩টি কম। এর আগে গত ৩০ জুন দেশে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৮২২ জন রোগী শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার গত ৩ অগাস্ট ছিল সর্বোচ্চ। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত ১ জুলাই করোনায় দেশে সবচেয়ে বেশি ১১৯ জনের মৃত্যু হয়।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষেণে দেখা গেছে, মৃতদের মধ্যে ৬৭ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ৩০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে। শূন্য থেকে ১০ বছরের রোগীর মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের রোগীদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৯০ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, ষাটোর্ধ্ব রোগীদের মৃত্যুর হার ৫৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ৩০ জন, চট্টগ্রামে ২৪ জন, রাজশাহীতে ২৪ জন, খুলনায় ৩৫ জন, বরিশালে ২ জন, সিলেটে ২ জন, রংপুরে ৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন মারা গেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর শতকরা হার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ৫১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, খুলনায় ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, বরিশালে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সিলেটে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, রংপুরে ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ২১ শতাংশ রোগী মারা গেছেন।
করোনার বছরেই বড় সুখবর
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি জীবনযাত্রায় করোনার ব্যাপক প্রভাব ছিল। জীবন ও জীবিকা ছিল সংকটে। এমন ক্রান্তিলগ্নের বছরটিতে বড় একটি সুখবরও মিলেছে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশ পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন সুখবর বাংলাদেশকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে আরেকটি সুখবর পেয়েছিল এ দেশের মানুষ। ওই বছর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ করে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের নাম সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। সিডিপির নিয়ম অনুযায়ী, পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে নির্দিষ্ট মান অর্জন করতে হয়। ২০১৮ সালের পর এবার দ্বিতীয় মূল্যায়নেও মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এই তিন সূচক দিয়ে একটি দেশ এলডিসি থেকে বের হতে পারবে কি না, তা ঠিক করা হয়। অন্তত দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে, যা এর আগে কোনো দেশ পারেনি। মান অর্জন করায় বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওসকে সুপারিশ করেছে সিডিপি। যোগ্যতা অর্জন করা সত্তে¡ও মিয়ানমার ও তিমুর লেসেথোকে সুপারিশ করা হয়নি। কোনো দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য সিডিপি প্রথমে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে (ইকোসক) সুপারিশ পাঠায়।
তারপর ইকোসক তা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে উঠবে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ। কিন্তু করোনা প্রেক্ষাপটসহ নানা বিবেচনায় বাংলাদেশকে বাড়তি দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, করোনার সংকটের মধ্যে এটি একটি সুখবর। আবার এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। করোনার কারণে সেই চ্যালেঞ্জ আরও বাড়ল।
এবার দেখা যাক বাংলাদেশ এই মুহূর্তে কোন কোন দেশের কাতারে আছে। উগান্ডা, কিরিবাতি, হাইতি, টুভালু, জিবুতি, গিনি, নেপাল, মিয়ানমারের মতো দেশের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশের কাতারে থাকবে বাংলাদেশ। তখন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।